‘আ’ নামের একটি প্রানির জন্য কতগুলো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে গেলো, বুঝে
নিয়েছিলাম ‘jami’ কে গলা টিপে শ্বাসরোধ করা তোমার জন্য
স্বাভাবিক সেই ‘আ’র জন্য। অতঃপর তুমি আবার ফিরে এলে। হয়তোবা কিছু কষ্ট দেয়া তখনো
অবশিষ্ট রয়ে গিয়েছিলো তোমার হাসি ঠাট্টার প্রেম প্রেম খেলায়। তাই এবার তুমি এলে
নতুন কোমলতায়। নতুন চেহারায় নতুন স্বপ্নের ডাকবাংলোতে নতুন হাসি আর দুষ্টুমির পসরা
বসানো এক ঝাঁক স্বপ্নের রঙিন ডালি নিয়ে মন মর্তলীলায়। আর আমায় দেখালে তোমায় নিয়ে
এক সাথে বাঁচার মহেন্দ্রাণী স্বপ্ন। আমিও দেখলাম বিভোর হয়ে, একটা ছোট্ট ফুলের
বাগানে থোকা থোকা ফুল আর মাঝখান থেকে বয়ে চলা ভালোবাসার অমিয় ধারা। তোমার কাল্পনিক
বাহুর শক্ত বাঁধনে দুটি প্রাণ এক সাথে যুগল বন্দী। তাই নরবে নিভৃতে তোমার বুকের
জলের জোয়ারহীন নদীতে চুমু দিয়ে জল টেনে নেবার আকাঙ্ক্ষায় হয়েছিলাম ঠিক গলা পর্যন্ত
তৃষ্ণার্ত। অথচ তুমি ভেবেছিলে তোমার শেষদিকের আচরণগুলো আমি বুঝতেই পারবো না। তুমি
কি করে ধরে নাও মেঘাচ্ছন্ন আকাশ দেখে চন্দ্রিমা তার শুকতারাকে ভুলে যাবে? নিষ্ঠুর
মহাকালের যাঁতাকলে চিরচেনা উপমার দল পুরনোর ছন্দের সুর হারাবে? যেখানে আত্মা
ছুঁয়েছিল আত্মাকে, সে কি নশ্বর দেহের মতন মৃত্তিকার কঠিন আঘাতে সুক্ষ সুক্ষ ধুলি
কণা হয়ে মিশে যাবে, তাই কি হয়? আমি তো তোমায় চিনে নিয়েছি অলিন্দের স্পন্দিত
অতীন্দ্রিয় কোন অনুভূতির খাজে শুকনো পাতার দল মড়মড় করে বাতাসে গুঞ্জন তুলে বলে
তুমি এসেছো। আমি যে ছায়াতেও তোমাকে চিনি। তাইতো তোমার মিথ্যাচারের নষ্ট মুখোশের
লাল নীল আঁকিবুঁকি প্রলোভনের পাকাপোক্ত রহস্যজড়িত তোমার মুখোছবি দেখে তোমার
ভালোবাসা নিয়ে হয়েছিলাম দ্বিধান্বিত, হয়েছিলাম সন্দিহান। আমার সেই সন্দেহকেই তুমি
কঠিন বাস্তবতার শক্ত চিবুকটি দেখিয়েছো। তুমি বলেছো তোমাকে ভুলে যেতে। আবারো নষ্ট
শপথের জ্বলন্ত কয়লায় ভস্মীভূত ভোরের মগ্নতা। আবারো রাত, অসীম রাত। আবারো ছলনার
ছলাকলে নিষ্পেষিত নিখাদ ভালোবাসা। সবই তোমার ইচ্ছের অধীন, এই মৌনতা, মেঘ, রোদ,
বৃষ্টি, ঝড়। কিন্তু তুমি জানো কি? তোমার ভালোবাসায় আমি অভ্যস্থ, সেই ভালোবাসার
অলঙ্ঘনীয় সিঁড়িটি আমি পার করে এসেছি যে ফিরে যাবার পথ ক্রমশ সঙ্কীর্ণ হয়ে বেঁকে
গেছে নিঃশেষিত পরাজয়ের দিকে। বলো কি করে আমি তোমায় ভুলে যাবো? এরপর.........। এরপর
কি হয়েছে শুনলে উপন্যাসের পাতায় ঘুমিয়ে পড়া শব থেকে মানবেতর ট্রাজেডিটিও চমকে জেগে
উঠবে। এরপর আমার চিরকালের অসীম ধৈর্য কাচের মতো ভেঙ্গে হয়েছে টুকরো টুকরো। আর আমি
কতো খণ্ডে খণ্ডিত হয়েছি সে নাই বা বললাম। জানো ভালোবাসার উপর বিশ্বাসও মরে গেছে
চিরতরে। মরে গেছে জগত সংসার ভুলে প্রেমের লালিমায় কাউকে রঙ মাখানোর স্বপ্ন বা
ইচ্ছা। শুধু বেঁচে আছে তোমার শেষদিকের ছলাকলার বিভ্রম স্মৃতিগুলো, যারা হিংস্র
প্রেতাত্মা হয়ে প্রতিনিয়ত ধারালো ছুরি দিয়ে খুবলে খুবলে পুরনো ব্যাথাগুলোকে
চাষাবাদ করে আমার বুকের জমিনে। আর আমি হই ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত। কখনো কখনো কষ্টের
তীব্র আঘাতে নিজেই নিজের মাঝে গুমরে গুমরে কেঁদে উঠি। আবার কখনো স্মৃতি ভ্রষ্টের
মতো নিজের মাঝে নিজে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে রই। যেন পৃথিবী থেমে গেছে দুঃসহ কষ্টের
নির্দয় সীমানা ধরে। বার বার একটা ভাবনায় স্তম্ভিত হই- তুমি তো ছিলে ধর্মপ্রেমী
নীতিবুলি আওড়ানো এক মানবী যাকে আমি দেবীর মতো হৃদয় অলিন্দে পুজো করতাম। ধর্মহীন ভীতুদের মতো সত্য
থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া অন্তসার শুন্য মানবী তুমি নও। তুমি কি করে এতোটা নিচে
নেমে এলে যে রাত্রির উচ্চশিখরে আরোহিত মাংসাশী পিশাচও তোমাকে দেখে লজ্জায় মুখ
লুকিয়ে নেবে। বলো আর কাকে করবো আমি বিশ্বাস??? শুনেছি তুমি খুব সুখেই আছো, মনে
নতুন নতুন রক্তকরবী আর কৃষ্ণচূড়ার রঙ মাখাচ্ছ। অথচ এক সময় তোমার বুকের লাল
গোলাপটিই ছিলাম আমি। কিন্তু এখন সেই বুকের পাঁজর অন্য গোলাপের প্রতীক্ষায়, বলো কি
দিয়ে আমি এই ব্যাথা ঢাকবো?? কষ্টগুলো যে আমার গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে রাখে, আর
আমি বার বার ফুঁপিয়ে উঠে ভাবি যদি এই নিয়তি মিথ্যে হয়ে যেতো। যদি এই জনমেই তুমি
আমার হতে, তবে কি খুব বেশী ক্ষতি হয়ে যেতো??? পরিশেষে এতোটুকু অনুনয়, তোমার
স্মৃতিগুলোকে তুমি ফিরিয়ে নিও। ওদেরকেও নিয়ে যেও তোমার সাথে। আমিও যে চাই তোমার
স্মৃতিছাড়া একটা জ্যোৎস্না উপচানো রাত। তোমায় ছেড়ে কেমন করে থাকি আমি দূরে, ভালো
থেকো আমার ভালোবাসা।
ইতি---
এক পরাজিত প্রেমী।