কোন এক রাতের অন্ধকারে আমার মাকে আমার কিছু না বলা কথা লিখেছিলাম। মা, আমি sacrifice করতে জানি। আমি sacrifice করতে জানি। আমি sacrifice করতে জানি, মা আমি নিজের স্বার্থকে বিসর্জন
দিতে জানি। আমি নিজের পছন্দ অন্যকে দিতে জানি, মানুষকে খুশী করতে নিজেরে কাঁদাতে
জানি। কেন জানো মা!! জানো না... আমি আর পাঁচজনের মতো না। একটু হলেও আলাদা তবে
বিশেষ কিছু নই। আমার বাইরের অবস্থা দেখে কেউ বুঝবে না, হা.. হা.. হা.. মানুষ সবাই
স্বার্থপর। সবার ভাবনাই নিজেকে নিয়ে আমার ভাবনাও তাই। আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনের
মূল্যবান অনেক কিছুই sacrifice করেছি। নিজের
হাসি আনন্দ, সুখ ঐশ্বর্য, ভালো বা মঙ্গল, সবকিছু থেকে নিজেকে বঞ্চিত রেখে sacrifice করে যাচ্ছি প্রতিমুহূর্তে। মা, জানো এই sacrifice করে কি হয়েছে?? যার জন্যে করেছি সে সুখে
আছে, আর আমি নীরবে রাতে সবার অগোচরে এই কথাগুলো লিখেছি। আবার নিকষ আঁধারে বিছানায়
নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি আর অতীত হাতড়াচ্ছি। কিন্তু জানো মা, আজব হলেও সত্যি আমার চোখ
থেকে সবসময় অশ্রু ঝরে না, এক অশ্রুবিহীন কান্না। তবুও মাঝে মাঝে দু’এক ফোঁটা
বেরিয়ে আসতে চায়, কিন্তু আমি চেপে রাখি। তুমি জানো না মা পাথরের কান্না নেই, সব
নীরবে সয়ে যায়। আমিও সেই পাথর হয়ে গেছি মা, কোনকিছুতেই কিছু মনে হয় না। মাঝে মাঝে
কি মনে হয় জানো? তোমরা যে ঈশ্বরের কথা বলো, ঐ যে ঈশ্বর নামে কে না কে ঐ দুর আকাশে
বসে আছে, উনি আমাকে শুধু sacrifice করার জন্য
সৃষ্টি করেছেন। ক্লিনিকে যখন দুইদিন পর জ্ঞান ফিরে আমার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে
দিতে দিতে বলেছিলে আমি স্বার্থপর, আমি জানি মা সত্যি আমি স্বার্থপর। তোমার জন্য
আমার কোন sacrifice নেই, আমি কখনও তোমাদের
জন্য কিছু করতে পারিনি। অন্যের জন্য sacrifice
করে নিজের জীবন নষ্ট করে তোমাদের দুঃখই ছাড়া আর কিছুই তো দিতে পারিনি। আমি
এতো বোকা কেন মা? নিজের বুঝ কখনও বুঝতে পারলাম না। জানো মা মাঝে মাঝে নিজেকে মানুষ
বলতে ইচ্ছে হয় না। মনে হয় আমি ভিন গ্রহের কোন প্রাণী, বা রোবট। অনুভুতি নেই, যেন
যন্ত্র দ্বারা চালিত। মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটাকে ধ্বংস করে ফেলি। চারদিকে এতো
ব্যর্থতা আর ভালো লাগেনা আমার। কিন্তু তখন মনে হয় তোমাদের কথা, কি নেই আমার! তুমি
আছো, বাবা আছে, আমার পরিবার আছে। সবাইতো আমাকে অনেক ভালোবাসে। যখন পরিবার টিকিয়ে
রাখতে পারলাম না হাজার চেষ্টা করেও তখন তাকে পেয়ে ভেবেছিলাম এবার তোমাদের সুখী
করার, দেখার মানুষ পেয়েছি। যাকে আমি একান্ত আপন মনে করেছিলাম সেও বাইরের মানুষের
মতোই আচরন করলো শেষ পর্যন্ত। এই অপমান সহ্য করতে না পেরে সেই যে ঘুমালাম......।
এরপর এখন ভাবি বাইরের কোন কারো জন্য আমি তোমাদের কাঁদাতে পারি না। না মা সেই
অধিকার আমার আর নেই। তাই তিলে তিলে শেষ করছি নিজেকে। আমার সবই তো আছে, তারপরেও মনে
হয় কি জানি নেই। অনেক সময় সব পরিচিত মানুষের ভিড়েও নিজেকে বড্ড একা আর অচেনা লাগে,
এই কি মা সেই আমি! তোমার হয়তো মনে হয় ‘আমি সেই আমি’, কিন্তু আমার কাছে আমি হলাম ‘
আমার হারানো আমি’। আমি sacrifice করতে জানি মা,
শুনলে তোমার কি গর্ব হবে মা?? তোমার ছেলে অন্যের মুখের হাসির জন্য নিজের হাসি sacrifice করতে জানে। নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে অন্যকে
সুখী করতে পারে। ঘড়ির কাঁটা আড়াইটা পেরিয়ে যাচ্ছে মা, টিক টিক করে সামনে এগিয়ে
চলছে। চলতে চলতে মহাকালের দিকে চলে যাবে। এক সময় তুমি থাকবে না, আমিও থাকবো না।
ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে না আমার নাম। আমি তো কোন মহৎ কেউ না, নই কোন দিগবিজয়ী।
আর হতেও চাই না, আমি চাইনা কেউ আমাকে মনে রাখুক। যার জন্য করেছি সেও যেন ভুলে যায়,
হয়তো এখনই ভুলে গেছে। সূর্য যেমন সবাইকে স্বার্থহীন আলো দেয়, আমিও তেমনি সবাইকে
সুখী করতে চাই। আমার জম্ম যেমন সূর্য উঠার সাথে সাথে, মৃত্যুও যেন সূর্যাস্তের
সাথে সাথে হয়। জীবনে এখনো আমার কোন আশাই পূরণ হয়নি, আর হবেও না। তুমি আশীর্বাদ করো
মা আমার এই আশা যেন অন্তত পূরণ হয়, তোমার ভগবানকে বলো আমার এই আশাটা পূরণ করতে।
আমি তাঁকে বলবো না মা, উনার সাথে আমি সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছি অনেক আগেই। তুমি বললে
উনি শুনবে মা। জানো মা, পরজম্ম বলে যদি কিছু থেকে থাকে তখন আমি পাখি হয়ে জম্মাতে
চাই। নীলের বিশালতায় উড়বো, থাকবে না কোন পিছুটান আর ভালোবাসার বন্ধন। শুধু উড়বো আর
উড়বো। আর যদি মানুষ হই তাহলে যেন তোমাদের ছেলে হয়ে আবার জম্মাতে পারি। জীবনে অনেক
ভুল করেছি, কিছুই হয়তো তুমি জানো না মা। তোমাকে জানতে দেইনি, এই চিঠি লেখার কথাও
জানবে না তুমি কোনদিন। তাই এই লেখাটা তোমাকে উৎসর্গ করছি। আমি sacrifice করতে জানি, মা...। তবুও চাই ভালো থাকুক আমার
ভালোবাসা।
No comments:
Post a Comment