আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীতে একদা একটি দ্বীপ
ছিল যেখানে বাস করতো সকল ধরণের অনুভুতি। প্রাচুর্য, সুখ, দুঃখ, দেমাগ, জ্ঞান এবং
ভালোবাসাসহ সকল অনুভুতির বাস ছিল দ্বীপটিতে। একদিন অনুভুতিদেরকে জানিয়ে দেয়া হলো
খুব শীঘ্রই এই দ্বীপটি ডুবে যাবে। এ সংবাদ পাওয়া মাত্রই সবাই জাহাজ তৈরি শুরু করলো
এবং একে একে দ্বীপ ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকলো। কিন্তু ভালোবাসা দ্বীপটি
ছেড়ে যেতে চাইছিল না। ভালবাসা ঠিক করলো সে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। আর এ কারণে
ভালোবাসা কোন নৌকা বা জাহাজ তৈরি করলো না। একদিন সত্যি সত্যি যখন সেই ক্ষণ এসে
উপস্থিত হলো তখন ভালোবাসা ঠিক করলো সে অন্য কারও জাহাজে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য
সাহায্য চাইবে। ভালোবাসা দেখল একটি বড়ো জাহাজ নিয়ে যাচ্ছে- প্রাচুর্য। ভালোবাসা
প্রাচুর্যকে বলল ‘তুমি কি আমাকে একটু তোমার জাহাজে নেবে’? জবাবে প্রাচুর্য বলল ‘আমার
জাহাজে অনেক সোনা-রুপা রয়েছে, এখানে তোমাকে নেওয়ার মতো কোন জায়গা নেই’। কিছুক্ষণ পরে
ভালোবাসার পাশ দিয়ে নৌকায় করে যাচ্ছিলো- দুঃখ। ভালোবাসা তাকে সাহায্য করার জন্য
অনুরোধ জানালো। দুঃখ উত্তর দিলো ‘আমি খুবই দুঃখিত। আমার এখন একা থাকার প্রয়োজন,
আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারবো না’। এরপর ভালোবাসা দেখল, খুব চমৎকার একটি জাহাজে
করে অহমিকা/দেমাগ যাচ্ছে। ভালোবাসা দেমাগের কাছেও তাকে নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানালো।
দেমাগ বলল, ‘তুমি সম্পূর্ণ ভিজে গিয়েছ। আমার এই সুন্দর জাহাজটিতে তোমাকে নিলে তুমি
একে নোংরা করে ফেলবে’। দেমাগের পরপরই ভালোবাসার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো সুখ। ভালোবাসা
কয়েকবার সুখকে ডাক দেওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু সুখ এতোই সুখে ছিল যে সে কারও কথাই
শুনতে পাচ্ছিলো না। সুখ কোন ভ্রুক্ষেপ না করে চলেই গেলো। এভাবে একে একে সবাই যখন
চলে যাচ্ছে তখন হটাৎ ভালোবাসা একটি কণ্ঠ শুনতে পেলো। একজন প্রবীণ তাকে বলল, ‘ভালোবাসা
তুমি আমার সাথে এসো। আমি তোমাকে সাহায্য করছি’। ভালোবাসা এতোই খুশী হলো যে সে
জানতেও চাইলো না এই প্রবীণ আসলে কে। একটি শুকনো ভূখণ্ডে ভালোবাসাকে নামিয়ে দিয়ে
প্রবীণ চলে গেলো। এমন সময় ভালোবাসার জানতে ইচ্ছে করলো কে তাকে এই বিপদে সাহায্য
করলো। ভালোবাসা তার পাশে থাকা আর এক প্রবীণ- জ্ঞানকে প্রশ্ন করলো, ‘জ্ঞান, যে মহৎ
হৃদয় প্রবীণ আমাকে এখানে নামিয়ে দিয়ে গেলো তিনি কে’? জ্ঞান বলল ‘সময়। সময় তোমাকে
এখানে নামিয়ে দিয়ে গেছে’। ‘সময়! কিন্তু সময় কেন আমাকে সাহায্য করলো, যখন সবাই আমাকে
ফেলে চলে যাচ্ছিলো’? ভালোবাসা আবারো জ্ঞানের নিকট জানতে চাইলো। আবার জ্ঞান গভীর
প্রজ্ঞার হাসি হেসে উত্তর দিলো, ‘কারণ একমাত্র সময়ই জানে ভালোবাসা কতো মূল্যবান’!!
ভালো থাকুক আমার সেই ভালোবাসা।
No comments:
Post a Comment